এক
রাত বারোটা বেজে গেছে। বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশে চাঁদ-তারা আছে নাকি নাই তা দেখার ইচ্ছে নাই সিফাতের। হয়তো আজ রাত পৃথিবীতে তার শেষ রাত। ঘুমিয়ে থাকা বাসার মানুষগুলো যখন সকালে জেগে উঠে দেখবে সিফাত আর বেঁচে নেই তখন তাদের প্রতিক্রিয়া যেটা হবে সেটা কল্পনা করে তার মন প্রথমে খুশি হলেও পরে বিষন্নতায় ভরে গেল।
প্রেমে পরাজিত ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবেই তার শেষ যাত্রা হবে এটাই কি ছিল নিয়তি! নাহ আর ভাবতে পারেনা সে। সামান্থাকে শেষ চিঠিটা লিখে শেষ করতেই হবে। তা না হলে মরে গিয়েও সে শান্তি পাবে না ।
বাবা তাকে একটুও বুঝতে চাইলো না । বকা দিয়েছে সেটা না হয় মেনে নেওয়া যায়, গালি দিয়েছে সেটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যে অপমান আর মাইর দিয়েছে সেটা সে কিছুতেই ভুলতে পারবেনা। এ জীবনে এই মার ধরের কথা ভুলা যাবেনা। সামান্থাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে সে বলেছে এটাই কি তার অপরাধ ? কি এমন ক্ষতি হতো বাবা সামান্থাদের বাসায় গিয়ে দেখা করলে ? এসব ভাবনায় অশ্রু চোখের বাধ না মেনে ঝড়ে পড়ে তরুণ প্রেমিক সিফাতের।
রাতে খাবার খাওয়ার সময় একমাত্র বোন কাজল ছাড়া কেউ লক্ষ করেনি সিফাতের এই ভালমানষি অভিনয়। এতকিছুর পরও একসাথে একটেবিলে খাবার খাওয়া যে তার পক্ষে সম্ভব নয় সেটা কি বাবা-মা একটু বুঝতে পারেনি। অবশ্য বুঝতে না পারাটা ভালই হয়েছে । সারাক্ষন পাহাড়ায় থাকতো। এখন নিশ্চয় নিশ্চিত ঘুমাচ্ছে। ছেলে রাতের খাবার খেয়েছে এত কিছুর পরেও আর চিন্তা কি। ঘুমাও বেশি করে ঘুমাও। আমিও মরন ঘুমে চলে যাব জীবনের ওপারে। দেখবো তখন কি করো তোমরা ? তোমাদের জিদ কি কাজে আসে-এটাই নিরালায় বসে ভেবে চলেছে সিফাত।
আরে বাবা একটা ছেলে একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছে বলেই কি সব শেষ হয়ে গেল। পরিবারের মান-সম্মানটা কোথায় নষ্ট হলো সিফাত তা ভেবে পেলনা। তাই তার ক্ষোভও প্রশমিত না হয়ে উত্তর উত্তর বেড়েই চলল।
সে যদি পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলতো তাহলে একটা কথা ছিল। সেরকমও কিছু করেনি তবুও অহংকারী বাবাটা এক কথায় সব নাকোচ করে দিল। নিজে প্রেম করে বিয়ে করেছে আর এখন ছেলের বেলায় যত মোল্লাগিরী। ইফ অসয্য আর ভাবতে পারেনা সিফাত।
মরে গিয়ে এর একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে যাব। রাগে গজ গজ করতে থাকে সিফাত। লাল কালিতে নীল রঙা কাগজে লেখা শুরু করল তার প্রেমিকাকে। এটাই সিফাতের শেষ চিঠি সামান্থাকে।
প্রিয় সামান্থা
জানি তুমি ভাল আছ । সবসময় ভাল থাক এটাই চাই। তুমি জানো আমি কি পরিস্থিার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তোমাকে ছাড়া আমি আর কাউকে ভাবতে পারিনা। আমি বেঁচে থাকবো অথচ তোমাকে পাবে না সেটা হতে পারেনা। তোমাকে কতটা ভালবাসি আমি তা বলে বুঝাতে পারবনা। আজ যা ঘটেছে তা বলার মত নয়। হয়তো তুমি তা জানবে কিন্তু ততক্ষণে আমি এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অন্য জগতে চলে যাব। যেখানে গেলে আর কেউ কোন দিন ফিরে না।
আসলে অনেক কিছু বলার ছিল, লেখার ছিল। কিন্তু মনটা বড়ই অশান্তিতে পূর্ণ। তুমি ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকবো। আর................................................।
ইতি তোমার ভালবাসা।
বিকালে কিনে আনা নীল গোলাপটা চিঠিটার উপর রেখে উঠে দাড়ল সিফাত। বড্ড পানি পিপাসা পেয়েছে। জগ থেকে পানি খেতে গিয়ে দেখে জগটায় আজ পানি নেই। দরজা খুলে পাশের রুমে কাজলের পড়ার টেবিল থেকে গ্লাসে ভারে পানি খেয়ে আরেক গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে নিজের রুমে ফিরে এল সে। ফিরার আগে দেখলো কাজল ঘুমিয়ে আছে, ডিম লাইটের আলোয় বোনকে শেষ বারের মত দেখে তার চোখের কোনে অশ্রু চলে এলো। এক মাত্র বোনটাকে সে অনেক ভালবাসে। না কোন মায়ায় গলে যাওয়া তার চলবেনা। আজ তার স্বেচ্ছা মৃত্যু কেউ রুখতে পারবেনা।
রুমে এসে ঘুমের ঐষধ এর কৌটাটা খুঁজতে থাকে সে। খাটের তোষকের নীচেইতো ছিল। কোথায় গেল ? টেবিল-ড্রয়ার, আলমারী সব তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলল সে, পাগল যেমন তার হারিয়ে যাওয়া গায়ের জামা খোঁজে ঠিক সেরকমভাবেই সে খুঁজে চলল তার ভবলীলা সাঙ্গ করার কাঙ্খিত অমৃত বিষ।
দুই.
কাজল জেগেই ছিল। সবাইকে লুকিয়ে একটা উপন্যাস পড়ছিল। যেই সিফাত তার নিজের রুমের দরজা খুলেছে সেই আওয়াজ পেয়ে তাড়াতারি বই বন্ধ করে ঘুমের ভান করে মরার মত পড়ে রইল। সিফাত চলে গেলে সে আবার টেবিল ল্যাম্প জেলে শুয়ে শুয়েই আকতারু্জ্জামন ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসের বাকি অংশটা পড়া শুরু করেছে। কিন্তু তার মনোযোগ নেই পড়ায়। ভাই যে একটা কিছু কান্ড ঘটাতে পারে তা কাজল অনুমান করেছে আগেই। অনুমানটা আরও শক্ত হয়েছে চলে যাওয়ার আগে অমন করে নিবারভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা। কাজলের বুকের ভিতরটা যেন খচ খচ করছে। অশুভ কিছু কি ঘটতে চলেছে! নিজেকেই প্রশ্ন করে কাজল। উত্তর অজানা।
হঠাৎ ঝড়ের বেগে সে দৌড়ে উপস্থিত হয় ভাইয়ের রুমে। হাপাতে হাপাতে সে দেখে তার ভাই খাটে নেই। চোখ যায় পড়ার টেবিলে। চেয়ারে বসে আছে সিফাত। কিন্তু তার মাথাটা টেবিলে হেলানো। রুমের লাইট জ্বালিয়ে কাছে যেতেই চমকে উঠে কাজল। সিফাতের অর্ধমৃত অবস্থা দেখে চিৎকার করে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে বাবা-মাকে জাগিয়ে তোলে। মেঝেতে পড়ে আছে ঘুমের ঐষধের কৌটা।
সোবহান সাহেব সব দেখে শুনে চোখ লাল করে বলেন-এই কুলাঙ্গার ছেলে যদি আত্মহত্যা করে মরেও যায় তবু তিনি টলবেন না। হাসপাতালাত নেওয়াতো দূরের কথা। সিফাতের মা মাতম করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন-আল্লাহ গো আমার সিফাতের কি হইছে গো। আল্লাহ আমর সিফাতরে বাঁচাও। সিফাত ও সিফাত কথা- ক বাপ আমার, তুই কথা ক। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পরিবারের সবার ছোট সদস্য রিফাত ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে ভাইয়ের দিকে। যেন অবিশ্বাস তার চোখে, যেন তার প্রানবন্ত ভাই এর এই হাল কোনকালে হতে পারে।
কাজল উপায় না দেখে সিফাতকে কোনমতে কোলে করে তিন তলা থেকে নামিয়ে বাসার পাশের হাতপালে নিয়ে যায়। জ্ঞানহীন সিফাত পড়ে থাকে হাসপাতালে। এত রাতে উটকো ঝামেলা এসে হাজির হওয়ায় খুবই বিরক্ত হয় কর্তব্যরত নার্স। সদ্য ঘুম ভাঙ্গা চাহনি সে কথাই সমর্থন করে। হাসপাতালে চাকরি করার এই এক জ্বালা। রাত-বিড়াতে হাজির হয় রোগী। শান্তি মত চোখ বন্ধ করে ঝিমানোরও সুযোগ পাওয়া যায় না কোন কোন দিন। কাজল ও তার মায়ের দাপটে এবং তৎপরতায় দ্রুত কাজ শুরু করে ডাক্তার ও নার্সরা।
সকাল হওয়ার আসেই বিপদমুক্ত হয় সিফাত। মা আর বোনের প্রার্থনা কবুল হয় খোদার দরবারে। জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলে সিফাত প্রথমে খোঁজে সামান্থাকে। তাকে দেখতে না পেয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ে এবং সামান্থা সামান্থা বলে বিড়বিড় করে।
মা আর কন্যা চোখ চাওয়া চাওয়ি করে। কাজল বুঝতে পারে ব্যাপারটা। সে বলে- মা সামান্থাকে খবর দেওয়া উচিৎ নয়তো ভাইয়া আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু তার মা আমতা আমতা করতে থাকে। কাজল বলে বাবাকে ভয় পাচ্ছতো, সেটা আমি সামলাবো। তুমি ভাইয়ার কাছে থাক আমি সামান্থার বান্ধবীকে পাঠাচ্ছি সামান্থাদের বাসায়।
রেখা সামান্থার বান্ধবী। কাজলদের বাসার কাছেই থাকে রেখারা। রেখা সব শুনে দেরি না করে তখনই রওনা হয়। ধানমন্ডি যেতে বেশিক্ষণ লাগেনি রেখার। সামান্থা সাত সকালে বান্ধবীকে দেখে বলে-কিরে আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো ? বলে কয়ে যাকে বাসায় আনতে পারিনা। বিনা বাক্য ব্যয়ে সেই বাসায় এসে উপস্থিত। তোকে এত বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেনরে ?
রেখা ম্লান হাসার চেষ্টা করে বলে-হেয়ালি রাখ। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। সিফাত ভাল নেই। ও এখন হাসপাতালে। ও তোকে দেখতে চায়। রেখার কাছে বিস্তারিত ঘটনা জানার পর দুচোখ অশ্রুসজল হয়ে আসে সামান্থার। ঠিক আছে আমি যাব তবে একটু দেরি হবে। তুমি গিয়ে বল যে – আমি আসছি।
সামান্থা ধনী ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র মেয়ে। প্রাচুর্যের মাঝেই সে বড় হয়েছে। সবসময় সেজে গুজে থাকতেই সে পছন্দ করে। সিফাতকে দেখতে যাওয়ার আসে তাই সে গেল পার্লারে। সেখান থেকে সেজে এসে তারপর সোজা হাসপাতালে।
তিন.
হাসপাতালে কাজল আর তার মা সামান্থাকে দেখে টাসকী খাওয়ার জোগাড়। যেন এক রাজকন্যা এসেছে হাসপাতালে রুগ্ন রোগীকে দেখার জন্য। রুপকথার সেই রাজকন্যার যেন এসে হাজির যার হাতের ছোঁয়ার আরোগ্য লাভ করবে রোগী। সিফাত তখন ঘুমিয়ে ছিল তাই কাজল ও তার মায়ের সাথে কথা বলেছে সামান্থা। সালাম বিনিময়ের পর সে বলেছে- আসলে আন্টী এই দুর্ঘটনার জন্য আমি কোন ভাবেই দায়ী নই। আমি সিফাতকে অনেক বুঝিয়েছে- যেহেতু আংকেল-আন্টি আমাদের রিলেশন মেনে নিচ্ছেননা তাই আমরা দুজন আলাদা হয়ে যে যার মত থাকি। কিন্তু সিফাত কোন কথা শুনেনি আমার।
সে সবসময়ই চাইতো আমি তার পাশে থাকি। আমি মানা করলে সে রাগ করতো। সে বলতো- সবকিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব কিন্তু তোমাকে না। আমি কি করবো আন্টি ? কথাগুলো বলার পর সামান্থার ছল ছল করে উঠে।
মাথা নীচু করে দাড়িয়ে থাকা সামান্থাকে কাছে টেনে নেন সিফাতের মা। না মা তুমি দুঃখ পেওনা। যা ঘটেছে তার জন্য সিফাতের পাগলামীই দায়ী। তুমি ওকে এখন কিছু বলনা। শুধু বল-‘ আমি তোমার পাশে আছি, তুমি সুস্থ্য হয়ে যাবে’ বলে শান্তনা দাও।
কাজল একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে সামান্থাকে সেই প্রেম পত্র ও নীল গোলাপ দিল। তারপর বলল- এগুলো তোমার ব্যাগে রেখে দাও, ভাইয়াকে জানতে দিওনা। আর ভাইয়া কিন্তু সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসে।
যাহ দুষ্টু মেয়ে বলে কাজল হাত দিয়ে আলতো করে ঠেলে সিফাতের কাছে চলে যায়। সিফাত চোখ খুলে দেখে তার পাশে তার প্রেমিকা স্বপ্নের মত হাতছানি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। স্বপ্ন না বাস্তব তা বুঝতে সিফাতের একটু সময় লাগলো।
সামান্থা সিফাতের হাত ধরে নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে ওকে শান্তনা দেয়। হাসি ফুটে উঠে সিফাতের। এভাবে অল্প কদিনের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসে সিফাত।
সিফাতের বাবা তখনও ছেলের উপর রাগ করে আছেন। সিফাত তার মাকে বুঝিয়ে বাবাকে রাজি করালো সামান্থাদের সবায় যাওয়ার জন্য। সিফাতের মায়ের মোটা গলায় বলা কথা-‘ শুনি ও বাসায় গেলে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে নাকি রাজ কাজের কোন ক্ষতি হবে। ছেলেটা যে মরতে বসেছিল সে তোমার এক ঘ্যারামীর জন্য’। স্ত্রীকে শান্ত করতে সোবহান সাহেব এবার রাজি হলেন। বাবা হিসেবে ছেলের মন রক্ষা করার জন্য একবার যাওয়া যেতে পারে।
মঙ্গলবারদিন সন্ধ্যায় সেজে গুজে সিফাতের বাবা –মা সামন্থাদের বাসায় গেল ফল মূল আর মিষ্টি নিয়ে। সিফাতের বাবা সামান্থাদের অবস্থা দেখে একে বারে মজে গেল। না ছেলেতো কোন ভুল করেনি। পরীর মত মিষ্টি এক মেয়েকে পছন্দ করেছে মেয়ের যেমন রূপ তেমনি তার বাবার সামাজিক অবস্থান। এক কথায় রাজকন্যা ও রাজ্য তার ছেলে বগলদাবা করতে যাচ্ছে বলে মনে হলো। মনে মনে ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য একটু অনুতপ্ত হলো।
সামান্থার মা আগে থেকেই সিফাত ও তার পরিবার সম্পর্কে জানতেন। ঢাকা শহরে সিফাদের চারতলা নিজস্ব বাড়ি আছে তার উপর সিফাত যথেস্ট ভদ্র ছেলে। তাই আপত্তির কোন কারণই নেই। তার মেয়ের এক মাত্র পছন্দ বলে কথা।
সিফাতের বাবা বলল- এখন যেহেতু দুজনই পড়া লেখা করছে, তো অনার্স শেষ হোক তখন বিয়ের ব্যবস্থা করবো এখন এনগেজমেন্ট করে রাখি। কিন্তু সান্থার মার এক কথা- বিয়ে এখন পড়িয়ে রাখবো। অনুষ্ঠান করে মেয়েকে পড়ালেখা শেষ হলে তুলে দেবো।
যথেস্ট আপ্যায়ন পেয়ে সিফাতের মা খুশি। কারণ তিনি খেতে ভালবাসেন। সামান্থার বাবা ব্যবসায়ের কাজে ঢাকার বাহিরে তাই দেখা হয়নি তার সাথে। এর কদিন পর সামান্থাদের বাসা থেকে অনেক ধরনের খাবার সিফাদের বাসায় সৌজন্যতামূলক হিসেবে পাঠানো হলে সিফাতের মা খুব খুশি হন এবং আত্মীয় স্বজনদের বলে বেড়াতে থাকেন তার হবু বউ এর রূপ-গুনের কথা এবং দেওয়া –থোয়ার কথা।
শুনে সবাই বলাবলি করে-ওমা বিয়ে না হতেই এমন কথা আর বিয়ে হলে জানি কি বলে বেড়াবে। একেই বলে গরু কিনার আগে দোয়ানী নিয়ে টানাটানি। মানুষ পারেও বটে এমন সৃষ্টিছাড়া কান্ড করতে।
চার.
ঘটনাটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত আত্মীয় স্বজনের কাছে। সিফাতের মামানীরা বলতো লাগলো- আহা! যেমন বাপ-মা তেমনি তার সন্তান। প্রেমের নামে সব দিওয়ানা। এই টুকুন ছোকড়া কিনা বিয়ার লাইগা অস্থির। কি সরমের কথা!
সিফাতের মা যতই শাক দিয়ে ঢাকুক কেউ কেউ মুখের উপর বলথত ছাড়েনা-ছেলে মেয়েকে লাই দিলে এমনি করে মাথা চিবিয়ে খাবে। যারা এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে তাদের চোখের সামনে দিয়েই সামান্থাদের বাড়ি থেকে সিফাতদের বাড়িতে ভাল মন্দ এটা-সেটা আসছে আর সিফাতের মাও কম যান না। তিনিও রান্না করা এটা সেটা পাঠাতে তৎপর।
সিফাত আর সামান্থা এখন অকেটাই সুখী পাখির মত যত্র তত্র উড়ে বেড়ায়। গান গায়, হাসে হাসায়। তবুও মাঝে মাঝে সিফাত বলে- আচ্ছা আমি যদি মরে যেতাম তুমি কি করতে ? এ কথা শুনে সামান্থা কপট রাগ দেখিয়ে বলে – তুমি আর কখনো এ কথা বলবেনা। তুমি মরে গেলে আমিও তোমার কাছে চলে যেতাম কিংবা বেঁচে থেকে মরে থাকতাম। আর মনটা তোমার কাছে চলে যেত। যে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই, সে জীবনে ভালবেসে ভালবাসায় অমর হতাম।
তোমার সেই নীল গোলাটা কিন্তু আজও আছে আমার ডায়রীর প্রতি পাতার ভাজে ভাজে। পাপড়িগুলো শুকিয়ে গেছে। ওখানে দুজনের নাম লিখে রেখেছি প্লাস চিহ্ন দিয়ে। যাতে আমাদের এ বাধন কভু ছিন্ন না হয়।
সিফাত বলে-দেখতে দেখতে দেড় বছর চলে যাবে তারপর মহা ধুমধাম করে তোমাকে আমার করে নেব। তুমি বধু সেজে থাকবে আমি পালকি নিয়ে আসবো।
হেসে সিফাত বলে – আচ্ছা যাও তাই হবে। ঘোড়ায় চেপে রাজপুত্র হয়ে আসবো। বিয়ে করে রাজকন্যাকে নিয়ে যাব।
তারপর কি হবে ? কি আর হবে-কোল জুড়ে নিষ্পাপ বাবু আসবে। তাকে নিয়ে দুজনে ব্যস্ত হয়ে পড়বো।
সংসার বাড়বে। বয়স বাড়বে কিন্তু ভালবাসা কমবেনা কোন দিন। এমনি করে রয়ে যাব দুজন দুজনার। এমন হাজারো কথামালা সাজিয়ে সময়কে স্বাক্ষী রেখে ওরা পেরিয়ে যায় উজন গাঙ্গের ঢেউ।
নিত্য নতুন দুষ্টমিতে মেতে থাকে দুজন আবার কখনো বা বাধ ভাঙ্গা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে সবুজ মাঠে। আর দূরের আকাশে তখন রোদের ঘ্রাণ মুছে ফেলে কোন এক সোনালী ডানার চিল। আাকশের বুক থেকে ফিরে আসে পৃথিবীতে তখন শিশিরের শব্দে বিকালের অগ্রাহায়ণের রোদ মরে গিয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা। সন্ধ্যার অন্ধকারে আরও নিবির হয়ে সামন্থা ও সীফাত। সামান্থার চুলে গুজে দেওয়া নীল গোলাপটা ঘ্রাণ ছড়ায় নীরবে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রেমের জন্য এক তরুণ প্রেমিকের পাগলামী তুলে ধরা হয়েছে গল্পে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।